Tuesday, May 31, 2022

গরু মোটাতাজাকরণের বিস্তারিত পদ্ধতি (ইউটিএগ্রোবিডি)

 

#utagrobd #krishibd #agrofarm #cowfarm #gotfarm #ইউটিএগ্রোবিডি #ইউটিএগ্রো #এগ্রোবিডি


গরু পালনে এখন সবচেয়ে বেশি লাভজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে মোটাতাজাকরণ প্রকল্প। মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে দ্বিতীয় প্রধান ধর্মীয় উৎসব কুরবানীর ঈদে বিপুল পরিমান চাহিদা তো রয়েছেই, তাছাড়া মানুষ এখন প্রচুর মাংস খায়। আর মাংসের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় গরুর মাংস। সারা বিশ্বেই কিন্তু জনপ্রিয়তার দিক থেকে গরুর মাংস এক নম্বরে। সুতরাং দেশের পাশাপাশি গরুর মাংস রপ্তানি করারও কিন্তু বড় সুযোগ আছে। তাছাড়া মোটাতাজাকরণ প্রকল্প দুগ্ধ খামারের (ডেইরি) চেয়ে কম ঝুঁকির। খরচও কম। কারণ গাভীর যত্ন, চিকিৎসা ও খাবারের পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয়। আবার দুধের বাজার এখনো অনিশ্চিত। দেশের বেশিরভাগ ছোট ও মাঝারি খামরিকে দুধের দৈনিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। ফলে এসব খামারির এক একটা দিন শুরু হয়ই অনিশ্চয়তা নিয়ে। কিন্তু মোটাতাজাকরণ খামারে সে ঝামেলা নেই। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে যারা ধীরে ধীরে এগোতে চান তাদের জন্য প্রায় নিশ্চিত লাভের উদ্যোগ হতে পারে গরু মোটাতাজাকরণ খামার। আর এ ধরনের খামার থেকে একসাথে বড় অংকের টাকা হাতে আসে। ফলে চাইলে খুব দ্রুতই বড় উদ্যোগ নেওয়ার সামর্থ্যও তৈরি হয়।

তবে আমাদের দেশে অনেক মোটাতাজাকরণ খামারি বেশি লাভের আশায় শুধু বিদেশী জাতের বড় সাইজের গরু পালন করতে চান। তারা এক গরুতেই এক মৌসুমে ১০ লাখ টাকা তুলে আনার স্বপ্ন দেখেন। এ কারণে আজকাল কুরবানীর ঈদের বাজারে প্রায়ই বিশাল আকৃতির হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান ষাঁড় দেখা যায়। কিন্তু সমস্যা হলো, এ ধরনের গরু পালন করা বেশ পরিশ্রমের ও ব্যয়সাপেক্ষ। এসব গরুর রোগবালাইও বেশি। গরমের সময় দিনের দুতিনবার গোসল করানোর পরও ২৪ ঘণ্টা ফ্যান চালিয়ে রাখতে হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এসব গরু বিক্রি করা। কারণ এতো বড় গরু তো কোটিপতি ব্যবসায়ী শিল্পপতি ছাড়া কিনবেন না। তাই বিক্রি করতে হলে ঢাকা, চট্টগ্রাম নিতে হয়। কিন্তু আজকাল মানুষের মধ্যে একা একটা গরু কুরবানী দেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। লক্ষ্য করে দেখবেন কুরবানীর হাটে এখন ছোট বা মাঝারি সাইজের দেশী বা সঙ্কর জাতের ষাঁড় বেশি বিক্রি হয়। দামও ভালোই পাওয়া যায়। তাই বলা যায়, এখন দেশী কিছু সঙ্কর জাতের ষাঁড় দিয়ে মোটাতাজাকরণ প্রকল্প শুরু করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর দেশী গরুর খাবার খরচ যেমন কম, এদের রোগবালাইও একেবারে কম। ফলে কম বিনিয়োগে বেশি লাভের সুযোগ আছে।

গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় ধারাবহিক কাজগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো:

০১. পশু নির্বাচন
০২. পরজীবী মুক্ত করা ও টিকা প্রদান
০৩. পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা
০৪. বাজারজাতকরণ

পশু নির্বাচন
মোটাতাজাকরণ কর্মসূচির জন্য গরু ক্রয়ের সময় প্রধান দুটি বিবেচ্য বিষয় হলো বয়স ও শারীরিক গঠন। 


ক. বয়স নির্ধারণ
মোটতাজা করার জন্য সাধারণত ২ থেকে ৫ বছর বয়সী গরু কেনা যেতে পারে, তবে ৩ বছর বয়সী গরু হলে ভালো। ষাঁড়, বলদ, গর্ভধারণে অক্ষম গাভী অথবা উঠতি বয়সের এঁড়ে বাছুর বেছে নেওয়া যেতে পারে।

খ. শারীরিক গঠন
মোটাতাজাকরণে ব্যবহৃত গরুর দৈহিক গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রেখে গরু নির্বাচন করা জরুরি।
• দেহ হবে বর্গাকার
• গায়ের চামড়া হবে ঢিলা (দুই আঙ্গুল দিয়ে ধরে টান দিয়ে দেখতে হবে)
• শরীরের হাড়গুলো আনুপাতিকহারে মোটা, মাথাটা চওড়া, ঘাড় চওড়া এবং খাটো
• পাগুলো খাটো এবং সোজাসুজিভাবে শরীরের সাথে যুক্ত
• পিছনের অংশ ও পিঠ চওড়া এবং লোম খাটে ও মিলানো
• গরু অপুষ্ট ও দুর্বল কিন্তু রোগা নয়
• পাকস্থলীতে পেরিস্টাল মুভমেন্ট থাকতে হবে
• গায়ের রঙ লাল বা কালো হলে ভালো দাম পাওয়া যায়। কারণ এ দুটি রঙ বেশ আকর্ষণীয়
• বুকের বেড় ৫০ থেকে ৬০ ইঞ্চি

পরজীবী মুক্ত করা
গবাদিপশুর দুই ধরনের পরজীবী দিয়ে আক্রান্ত হতে পারে। ক. বহিঃপরজীবী খ. অন্তঃপরজীবী

বহিঃপরজীবী মুক্ত করা
বহিঃপরজীবী বলতে উকুন, আঠালি, সিঁদুর পোকা ইত্যাদিকে বুঝায়। এ ধরনের পরজীবী তাড়াতে একটি গরুর জন্য নিউসিডল বা এনোসটোল পাউডার ১০ কেজি পানিতে ২.৫ চা চামচ মিশাতে হবে। তারপর বসতি থেকে কিছুটা দূরে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে প্রথমে ভালোভাবে নাক-মুখ বেঁধে কান, চোখ, মুখ ছাড়া শরীরের সর্বত্র ওষুধ মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে কানের ভেতর, চোখের চতুরপার্শ্বে, নাক, মুখ লেজের গোড়া, শরীরের সঙ্গে পায়ের সংযোগস্থলসহ সকল সংকীর্ণ জায়গায় লাগাতে হবে। ওধুষ লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করার পরে পরিষ্কার পানি দিয়ে শরীরের সর্বত্র ভালোভাবে ধুয়ে ওষুধমুক্ত করতে হবে। ওষুধ লাগানোর ২/১ দিন পর যদি দেখা যায় ভালোভাবে বাহ্যিক পরজীবী মুক্ত হয়নি তবে ১৫ দিন পরে আবার একই নিয়মে ওষুধ লাগাতে হবে।

সর্তকতা
১. যে ব্যক্তি ওষুধ লাগাবেন, তিনি গরুর শরীরের ক্ষতস্থান সম্পর্কে সচেতন থাকবেন, কারণ এই ওষুধ বিষ জাতীয়।
২. গরুর শরীরে ক্ষতস্থানকে (যদি ভালোভাবে না শুকিয়ে থাকে) এড়িয়ে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।

৩. গরুকে ওষুধ প্রয়োগের পর ভালোভাবে গোসল করিয়ে কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে মুখের বাঁধন খুলতে হবে কারণ গরু স্বভাবত ওষুধ লাগা ঘাস বা পানি খেয়ে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।

অভ্যন্তরীণ পরজীবী মুক্ত করা
১. গোল কৃমি
২. কলিজা বা পাতা কৃমি।

পশুচিকিৎসকের নির্দেশনা মতো কৃমিনাশক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। গরু সংগ্রহের পরপরই পালের সব গরুকে একসাথে কৃমিমুক্ত করা উচিত। প্রতি ৭৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১টি করে এনডেক্স বা এন্টিওয়ার্ম টাবলেট ব্যবহার  করা যেতে পারে।

গোলকৃমি
গোলকৃমি মুক্ত করতে নিচের যে কোনো একটি ওষুধ ব্যবহার করা যায়
মেনাফেং পাউডার = ১ প্যাকেট ১টি গরুর জন্য
অথবা নেমাফেক্স বড়ি = ৩টি বড়ি একটি পূর্ণ বয়স্ক গরুর জন্য = ২টি বড়ি মাঝারি ও ছোট বাছুরের জন্য
অথবা কোপেন পাউডার = ১টি প্যাকেট একটি গরুর জন্য
অথবা রিনটাল পাউডার = ৭.৫ মি গ্রাম প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য

বিঃদ্রঃ রিনটাল পাউডার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো কারণ এই ওষুধে ছোট বড় মাঝারি সব ধরনের কৃমি মারা যায়। গোলকৃমির ওষুধ খাওয়ানোর পরে সবল গরু ৩ দিন এবং অন্যান্য গরুর ক্ষেত্রে ৭দিন অপেক্ষা করে তারপর পাতাকৃমির ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।

২. কলিজা বা পাতা কৃমি
চামড়ার নিচে টোডাক্স ইনজেকশন করতে হবে। মাত্রা সাধারণভাবে ২/৩ সিসি, প্রাপ্তবয়স্ক গরুর জন্য। মোটাতাজা করতে হলে ২ সিসি পরিমান ইনজেকশন করতে হয়। এই ওষুধ প্রয়োগের ৩ দিন অপেক্ষা করার পরে ইউরিয়া মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো আরম্ভ করতে হবে। টোডাং ইনজেকশন ৭ দিন পর পর ২ বার দিতে হবে এবং তখন খাবার বন্ধ করার কোনো প্রয়োজন নাই।

টিকা দেওয়া
আগে থেকে টিকা না দেওয়া থাকলে খামারে আনার পরপরই সবগুলো গরুকে তড়কা, বাদলা এবং ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হবে। এ ব্যাপারে নিকটস্থ পশু হাসপাতলে যোগাযোগ করতে হবে।

ঘর তৈরি ও আবসন ব্যবস্থাপনা
আমদের দেশের অধিকাংশ খামারি ২/৩ টি পশু মোটাতাজা করে থাকে, যার জন্য সাধারণত আধুনিক সেড করার প্রয়োজন পড়ে না। তবে যে ধরনের ঘরেই গরু রাখা হোক ঘরের মধ্যে পর্যন্ত আলো ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঘরের মল- মূত্র ও অন্যান্য আবর্জনা যাতে সহজেই পরিষ্কার করা যায় সে দিকে খেয়াল রেখে ঘরে তৈরি করতে হবে।

পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা
গরু মোটতাজাকরণে দুই ধরনের খাদ্যের সমন্বয়ে রসদ (রেশন) তৈরি করা হয়।
আঁশ জাতীয়: শুধু খড়, ইউএমএস, সবুজ ঘাস ইত্যাদি। তবে এই প্রক্রিয়ায় খামারিদেরকে শুধু খড়ের পরিবর্তে ইউএমএস (ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা ইউরিয়া সার+ঝোলাগুড়+খড় ) খাওয়াতে হবে।
দানাদার: খৈল, ভুসি, চালের কুঁড়া, খুদ, শুঁটকি মাছ, ঝিনুকের গুঁড়া, লবণ ইত্যাদি।

ইউএমএস
ইউরিয়া + খড়+ পানি+ মোলাসেস বা ঝোলাগুড়। এ খাদ্যমাত্রা হবে ইচ্ছামতো। অর্থাৎ গরু রুচিমতো খাবে। তবে এ ক্ষেত্রে অসুবিধা হলো এ খাবার তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যায় না। প্রস্তুতের তিনটি উপাদানের অনুপাত সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে। এ কারণ ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক তৈরি করা যেতে পারে।

দুটি সাধারণ খাদ্য ফর্মুলা দেখে নিন:
খড়ভিত্তিক খাদ্য ফরমুলা: ইউএমএস ইচ্ছামতো + দানাদার মিশ্রণ। (দৈনিক ওজনের শতকরা ১ ভাগ)
সবুজ ঘাসভিত্তিক খাদ্য ফরমুলা : সবুজ ঘাস + দানাদার মিশ্রণ । ( দৈহিক ওজনের শতকরা ১ ভাগ)

বিভিন্ন খাবার খাওয়ানোর পরিমাণ
গরুকে ইচ্ছা অনুযায়ী, অর্থাৎ গরু যে পরিমান খেতে পারে সে পরিমান ইউএমএস সরবারাহ করতে হবে।
সবুজ ঘাস খাওয়াতে চাইলে প্রতি ১০০ কেজি কাঁচা  ঘাসের সাথে ৩ কেজি চিটাগুড় মিশিয়ে গরুকে খাওয়াতে পারেন। এক্ষেত্রে কাঁচা ঘাসও গরুকে পর্যাপ্ত পরিমানে সরবরাহ করতে হবে।

দানাদর মিশ্রণ
খামারিদের সুবিধার জন্য নিচে দানাদার মিশ্রণ তৈরির বিভিন্ন উপাদান পরিমাণসহ উল্লেখ  করা হলো:

১ নং মিশ্রণ
ক. তিলের খৈল = ৪ কেজি
খ. চালের কুঁড়া = ৪ কেজি
গ. গমের ভূষি = ৪ কেজি
ঘ. যে কোন ডালের ভূষি = ৪ কেজি

২নং মিশ্রণ
ক. গম ভাঙ্গা =৪কেজি
খ. তিলের খৈল = ৪ কেজি
গ. চালের কুঁড়া = ৪ কেজি
ঘ. ডাল ভাঙ্গা, খেসারি = ৪ কেজি

যেকোনো একটি দানাদার মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে। কৃমি দূর করার আগে গরুকে ইউরিয়া মিশ্রিত উন্নত খাবার (ইউএমএস) দেওয়া যাবে না।

খাওয়ানোর পরিমাণ
গরুকে দেহের ওজন অনুপাতে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। উপরের দানাদার মিশ্রণটি গরুর ওজনের শতকরা ০.৮-১ ভাগ পরিমান সরবরাহ করলেই চলবে। দানাদার মিশ্রণটি একবারে না খাইয়ে ভাগ ভাগ করে সকালে এবং বিকালে খাওয়াতে হবে। গরুকে পর্যান্ত পরিমাণে পরিষ্কার খাওয়ার পানি সরবরাহ করতে হবে। কোনোভাবেই বাসি পানি, পচা বাসি খাবার মেশানো পানি, পুকুর, ডোবা বা নদীর পানি খাওয়ানো যাবে ন।

দৈনিক খাদ্য তালিকা
গরু মোটাতাজা করার জন্য ১৫০ থেকে ২শ’ কেজি ওজনের একটি গরুকে প্রতিদিন ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক ৩শ’ গ্রাম, খড় ৪ কেজি, সবুজ কাঁচাঘাস ১২ কেজি আর দানাদার খাদ্য ৩ কেজি, চালের কুঁড়া ১ কেজি, গমের ভুসি ১.২৫ কেজি (সোয়া কেজি), তিলের খৈল ৪শ’ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়া ৫০ গ্রাম, লবণ ৫০ গ্রাম, ঝোলাগুড় ২৫০ গ্রাম এবং পানি পর্যাপ্ত পরিমাণ খাওয়াতে হবে। এছাড়া যদি ইউরিয়া প্রক্রিয়াজাত খড় (ইউএমএস) খাওয়ানো হয় তবে সেক্ষেত্রে তা ৩ থেকে ৪ কেজি হবে। দৈনিক এর বেশি খাওয়ানো ঠিক হবে না।

ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক তৈরি পদ্ধতি
ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক তৈরিতে যেসব উপকরণ লাগে তা হলো- গমের ভুসি ৩ কেজি, ঝোলাগুড় ৬ কেজি, ইউরিয়া ৯০ গ্রাম, লবণ ৩৫ গ্রাম, ৫শ’ গ্রাম খাবার চুন এবং কাঠের ছাঁচ। এগুলো সংগ্রহ করে সামান্য ভিটামিন ও খনিজ লবণ মিশ্রণ একটি লোহার কড়াইতে চিটাগুড়সহ জ্বাল দিয়ে সামান্য ঘন করতে হবে। কড়াই চুলা থেকে নামিয়ে কড়াইয়ের মধ্যে চিটাগুড়ে ইউরিয়া, চুন, লবণ, ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ এবং ভুসি দিয়ে ভালো করে মেশাতে হবে। তারপর ছাঁচের মধ্যে কিছু ভুসি ছিটিয়ে মিশ্রিত দ্রব্যগুলো ভরে ব্লক তৈরি করতে হবে। 

একটি গরুকে দৈনিক ৩শ’ গ্রাম ব্লক জিভ দিয়ে চেটে চেটে খেতে দিতে হবে অর্থাৎ ১টি ব্লক একটি গরুকে ৩ দিন খাওয়াতে হবে। প্রথমে ব্লক চাটতে না চাইলে ব্লকের ওপর সামান্য ভুসি ও লবণ ছিটিয়ে দিলে আস্তে আস্তে চাটার অভ্যাস হবে।
খড়ের সাথে মিশিয়ে ইউরিয়া খাওয়ানোর নিয়ম

খড় প্রক্রিয়াকরণ
১০ কেজি খড়, ১০ কেজি পানি এবং ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া বায়ুরোধী বড় বাঁশের ডোল (পাত্রবিশেষ) বা ইটের তৈরি হাউজে ৭-১০ দিন আবদ্ধ বায়ুরোধী অবস্থায় রেখে দিতে হবে। তারপর ঐ খড় বের করে রৌদ্রে শুকিয়ে নিতে হবে যেন ইউরিয়ার তীব্র গন্ধ কিছুটা কমে আসে। এই খড় গরু প্রথমে না খেলে কিছুটা চিড়াগুড় মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে।
গরুকে প্রথমে দৈনিক ২০০-৫০০ গ্রাম ইউএমএসের মধ্যে ৫ গ্রাম থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০-৬০ গ্রাম ইউরিয়া খাওয়ানো যায়। ছোট গরুর ক্ষেত্রে ৩০-৪০ গ্রামের বেশি দৈনিক খাওয়ানো উচিত নয়।

দানাদার খাদ্যে ইউরিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন ওজনের গবাদি পশুর দৈনিক খাদ্যের তালিকার নমুনা:

১০০ কেজি দৈহিক ওজনের গবাদিপশুর খাদ্য তালিকা
ধানের খড় = ২ কেজি
সবুজ ঘাস = ২ কেজি (ঘাস না থাকলে খড় ব্যবহার করতে হবে
দানদার খাদ্যের মিশ্রণ = ১.২-২.৫ কেজি
ইউরিয়া = ৩৫ গ্রাম (নিয়মানুযায়ী)
চিটাগুড়া = ২০০-৪০০ গ্রাম
লবণ = ২৫ গ্রাম

দানাদার খাদ্যের সাথে লবণ, ইউরিয়া, চিটাগুড় একসাথে মিশিয়ে দিনে ২ বার দিতে হবে। ধানের খড় এবং কাঁচা ঘাস ছোট ছোট করে কেটে এক সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।

১৫০ কেজি ওজনের গবাদিপশুর খাদ্য তালিকা
খড় = ৩ কেজি
কাঁচা ঘাস = ৫-৬ কেজি
দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ = ১.৫-২ কেজি
চিটাগুড় = ৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া = ৪৫ গ্রাম (নিয়মানুয়ায়ী)
লবণ = ৩৫ গ্রাম

১৫০-২০০ কেজি ওজনের পশুর খাদ্য তালিকা
ধানের খড় = ৪ কেজি
কাঁচা ঘাস = ৫-৬ কেজি
দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ = ১.৫-২ কেজি
চিটাগুড় = ৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া = ৪৫ গ্রাম (নিয়মানুযায়ী)
লবণ = ৩৫ গ্রাম

গবাদিপশুকে ইউরিয়া প্রক্রিয়াজাত খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সর্তকতা
১. এক বছরের নিচে গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না।
২. কখনও মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না
৩. গর্ভাবস্থায় ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না।
৪. অসুস্থ গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না, তবে দূর্বল গরুকে পরিমাণের চেয়ে কম খাওয়ানো যেতে পারে।
৫. ইউরিয়া খাওয়ানোর প্রাথমিক অবস্থা (৭ দিন পর্যন্ত পশুকে ঠান্ডা ছায়াযুক্ত স্থানে বেঁধে রাখতে হবে এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। প্রকল্প মেয়াদ তিন মাস, শুরু হবে ইউরিয়া মিশ্রিত খাবার প্রদানের দিন থেকে।
এই খবার খাওয়ানো শুরুর ১০-১৫ দিন পর হেমাটোপিন বিএস (১০এমএল) ইনজেকশন মাংসপেশীতে প্রয়োগ করলে মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।

দৈহিক ওজন নির্ণয়
মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় নিয়মিত গরুর দৈহিক ওজন নির্ণয় খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেননা গরুর খাদ্য সরবরাহ,ঔষধ সরবরাহ ইত্যাদি কাজগুলো করতে হয় দৈহিক ওজনের ভিত্তিতে। তাছাড়া সরবরাহ করা খাবারে কাঙ্ক্ষিত ওজন মিলছে কি না সেটিও নিয়মিত যাচাই করা দরকার।






...............................................................TAG...................................................................................
ফসল, পশু-পাখি পালন, কৃষি প্রযুক্তি, শাক-সবজি, crops, দানাশস্য, পশু-পাখির রোগ, ডিজিটাল বই, মৎস্য চাষ, পশুপাখির খাদ্য, বিবিধ, অর্থকরী ফসল, বায়োফ্লক, জৈব, কৃষি, ডাল, ১২ মাসের রুটিন, গরুর জাত, তেলবীজ, ফসলের রোগ, গরু, মসলা, ছাগল পালন, ধানের রোগ, ফল, ঔষধি উদ্ভিদ, চাষ পদ্ধতি, পেঁয়াজ, ভেষজ, livestock, ছাগলের খামার, ধান, নগরকৃষি, মুরগির জাত, হাইড্রোপনিক, ওষুধি গাছ, গরু মোটাতাজাকরণ, জমিজমা, তুলা-রেশম ,দেশী জাতের গরু, প্রাণী অধিকার, ভ্যাকসিন, সাথি ফসল, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি, ছাগল, ছাগলের জাত, ছাদবাগান, বিকল্প খামার, বিদেশী ফসল ,ভূমি পরিমাপ, মোটাতাজাকরণ, লাইভস্টক, garden ,আলু, গরুর খামার, ডেইরি, দুগ্ধ খামার, ফলের বাগান, ভেড়া, মুরগি, মুরগী হাইড্রোপনিক পদ্ধতি,chicken grass, আদি জাত, আন্তঃফসল, ইউরিয়া, উন্নত জাত, এমওপি ,কাঠ, কৃমিনাশক, কৃষি ক্যালেন্ডার, কোল্ড ইনজুরি, ক্যাপসিকাম, ক্রনিক ব্লট, খরগোশ, খাঁচায় মাছ চাষ, খাটো হাইব্রিড নারিকেল, খেসারি, খড়ের পুষ্টিগুণ, গরু হিটে না আসার কারণ, গরুর খাবার, গরুর শেড, গরুর-জাত, গাভী পালন, গাড়ল, গোখাদ্য, ঘোড়া শিম, চট্টগ্রামের লাল গরু, চিংড়ি, চোখের কৃমি, ছাগল পরিবহন, জিঙ্ক, জৈব বালাইদমন, টমেটো চাষ, টিএসপি, ডিওপি, ড্যাপ, ড্রাগন ফল, তুলা চাষ পদ্ধতি, ত্বীন ফল, দলিলপত্র, ধানের খোল পচা রোগ, ধানের পাতা পোড়া রোগ, ধানের ব্লাস্ট, ধানের লক্ষ্মীর গু, নর্থ বেঙ্গল গ্রে ক্যাটল, নারিকেল, নার্সারি, নীল, পটাশ, পাউলোনিয়া, পাবনা ক্যাটল, পেট ফাঁপা ও ডায়রিয়া, ফসলের পুষ্টি ঘাটতির লক্ষণ, বাঁশ, বাদামি দাগ রোগ, বারি জ্যাক শিম-১, বালাইনাশক, বিইউ শিম ৫, বিসিএস স্কোর, বেলজিয়ান ব্লু, ব্রয়লার, ব্রয়লার মুরগি, ব্লাড প্রোটোজোয়া, ব্ল্যাক বেঙ্গল, ভেড়া পালন, মহিষ, মহিষ পালন, মাছ, মাছ চাষ, মাজরা পোকা, মাটির স্বাস্থ্য, মিরকাদিমের সাদা গরু, মুন্সীগঞ্জ জাতের গরু, মুরগির টিকা. ময়ূরের খামার, রাসায়নিক সার, রেড চিটাগাং ক্যাটল, লাউ, লিভার টনিক, লেবু, লেয়ার মুরগি পালন, শুকর পালনশেড নির্মাণ, সংকর জাতের গরু, স্টিভিয়া, স্ট্রবেরি চাষ, হাঁস পালন, হাঁস-মুরগি পালন, হাজল পদ্ধতিতে মুরগীর বাচ্চা ফুটানো

শেয়ার করুন

0 coment rios: