উদ্ভিদ কলম হলো কৃত্রিম উপায়ে উদ্ভিদের বংশ বৃদ্ধির এক ধরনের প্রক্রিয়া যেখানে এক উদ্ভিদের শাখা কেটে নিয়ে অন্য উদ্ভিদে সংযোজন করা হয়।
ছেদ কলম, দাবা কলম, ও জোড় কলম পদ্ধতি:
উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধিতে প্রযুক্তির অবদান অনেক। প্রযুক্তি প্রাচীন হােক কিংবা আধুনিক হােক, চালু প্রযুক্তির কোনােটির অবদানই অস্বীকার করা যায় না।
নিচে উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধিতে প্রযুক্তির অবদান তুলে ধরা। হলাে।
অঙ্গজ চারা উৎপাদন
প্রায় সব গাছই বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। তবে বীজ ছাড়াও গাছের বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে চারা উৎপাদন এবং বংশবিস্তার করা সম্ভব।
অঙ্গজ চারার ব্যবহার কৃষিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে এবং এ থেকে কৃষকেরা অনেক লাভবান হচ্ছেন।
চারা উৎপাদন প্রযুক্তির মধ্যে কর্তন বা ছেদ কলম, দাবা কলম, গুটি কলম, জোড় কলম এবং চোখ কলম প্রধান।
অঙ্গজ চারার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলাে এ থেকে জন্মানাে গাছে মাতৃগাছের বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন থাকে।
আর চারা গাছ থেকে তাড়াতাড়ি ফল পেতে হলে অঙ্গজ চারা উৎপাদন পদ্ধতির জুড়ি নেই।
নিচে কলম পদ্ধতিতে অঙ্গজ চারা উৎপাদনের কয়েকটি পদ্ধতি দেওয়া হলাে।
১) কর্তন বা ছেদ কলম পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে শাখা, মূল, পাতা ইত্যাদি মাতৃগাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ছায়াযুক্ত স্থানে টবে বা । নার্সারি বেডে রােপণ করতে হয়। ১৫ দিনের মধ্যে তা থেকে। নতুন চারা উৎপন্ন হয়। অতঃপর চারাটি অন্যত্র মূল জমিতে রােপণ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় বংশবিস্তার খুবই সহজ। গােলাপ, লেবু ইত্যাদি ফুল ও ফল গাছের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
২) দাবা কলম : প্রথমে মাতৃগাছের মাটির নিকটে অবস্থিত শাখা নিচে নামিয়ে দুই গিটের মাঝখানের বাকল কাটতে হবে। বাকলের নিচের সবুজ অংশে ছুরির ভােতা পাশ দিয়ে চেছে ফেলতে হবে। অতঃপর কাটা অংশ মাটিতে চাপা দিতে হবে। কিছু দিন পর কাটা অংশ থেকে শিকড় গজাবে এবং নতুন চারা হবে। গজানাে অংশ কেটে ২-৩ সপ্তাহ পর সাবধানে মাটিসহ উঠিয়ে অন্যত্র রােপণ করতে হয়। লেব, পেয়ারা, গােলাপ, ইত্যাদি গাছে দাবা কলম করা হয়।
৩) জোড় কলম : জোড় কলমের দুটি অংশ (১) রুট স্টক ও (২) সায়ন। অনুন্নত যে গাছের সঙ্গে জোড়া লাগানাে হবে সে গাছটিকে । রুট স্টক বলে। যে অঙ্গে উন্নত জাতের গাছের স্টকের সঙ্গে | ল লাগানাে হবে তাকে বলা হয় সায়ন। রুট স্টক ও সায়নের জোড়া লাগানাে পদ্ধতিকে জোড় কলম বলে। জোড়কলম Show প্রধানত দু’ধরনের হয়। যেমন-যুক্ত জোড় কলম ও বিযুক্ত জোড় কলম। জোড় কলমের মাধ্যমে বর্তমানে আম, তেজপাতা, সফেদা প্রভৃতি গাছের বংশবিস্তার করা হচ্ছে।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি
কার্য পদ্ধতি
মাতৃ উদ্ভিদ হতে শাখা বা চিকন ডাল নির্বাচন করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে নিতে হবে।
- যে উদ্ভিদের সাথে যুক্ত করতে হবে তার শাখার কিছু অংশ পাতাসহ এমন ভাবে কেটে ফেলতে হবে যাতে দুটিই আকৃতিতে মিলে যায়।
- মাতৃ উদ্ভিদ কে মধ্যে দুই ইঞ্চি পরিমাণ ফাটিয়ে এবং চারাগাছ এর অগ্রভাগ চ্যাপ্টা করে নিয়ে জোড়া লাগিয়ে দিতে হবে।
- জোড়ার স্থানে ভালো ভাবে বেঁধে দিতে হবে। এজন্য টেপ পেরিয়ে দেয়া হয়।
- কিছু দিন পর দুই অংশের সাথে জোড়া লেগে গেলে টেপ খুলে ফেলতে হয়।
পরিচর্যা
- কলম করার পর সেই ডালের জোড়ার সাথে যাতে কোন আঘাত না লাগে সেদিকে লক্ষ রাখতে হয়; কারণ এতে কলম মারা যেতে পারে।
উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য যে স্বাভাবিক পরিবেশ তা রাখতে হবে ।
0 coment rios: